গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে বলেশ্বর নদ পাড়ের বগী এলাকায় রিংবাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রামের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হয়। এখন তিন সপ্তাহ পার হলেও দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে এলাকাগুলো প্লাবিত হচ্ছে। ভাটায় পানি নেমে গেলেও জোয়ারের সময় নদ পাড়ের মানুষদের দুর্ভোগে দিন পার করতে হচ্ছে।
তবে, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শিগগিরই রিংবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বগী এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙা রিংবাঁধের বিভিন্ন অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি গ্রামে প্রবেশ করছে। বাড়িঘরে পানি আসায় অনেকে পরিবার নিয়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তায় বসবাস করছেন। বলেশ্বর নদ পাড়ের মসজিদ কাম সাইক্লোন শেল্টার থেকে বগী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রিংবাঁধের আটটি স্থান সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় রিংবাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে এবং বাঁধ উপচে নদের পাড়ের বগী, দক্ষিণ চালিতাবুনিয়া এবং দক্ষিণ খুড়িয়াখালি- এ তিনটি গ্রামের বিভিন্ন অংশে পানি ঢুকে পড়ে। তার জেরে এখনও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই তিনটি গ্রামের কয়েক শ পরিবারের বাসিন্দাদের।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের তাণ্ডবে বলেশ্বর নদ পাড়ের বেড়িবাঁধ লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তখন থেকে ওই এলাকার মানুষ টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছেন। তবে, সিডর আঘাত হানার এক যুগ পার হলেও বলেশ্বর নদের পাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করা যায়নি।
বগী এলাকার বাসিন্দা মোমিন উদ্দিন হাওলাদার জানান, তার ৯০ বছরের জীবনে আটবার তাদের বসতবাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে। বলেশ্বর নদে তার আগের বাড়িঘর ভেঙে বিলিন হয়ে গেছে। নতুন করে যেখানে বাড়ি করেছে তাও ভাঙনের মুখে রয়েছে। একের পর এক নদী ভাঙনের কারণে তার সহায় সম্পদ হারাতে হয়েছে।
একই এলাকার সোনিয়া বেগম জানান, বাঁধের পাশেই তাদের বাড়ি। বাঁধ ভেঙে তাদের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পানির কারণে এখন বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পানির চাপে যেকোনো সময় তাদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা ওই নারীর।
নদের পাড়ের বাসিন্দা মো. সোহাগ হাওলাদার জানান, নদে পানি বৃদ্ধি পেলেই বগী এলাকায় রিংবাঁধ ভেঙে যায়। প্রতিবছর কয়েক দফায় বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভাঙে। আম্পানে বাঁধ ভেঙে তাদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন দুই বেলা জোয়ারে ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি বাড়িতে প্রবেশ করছে। প্রতিবার বাঁধ ভাঙার পর নানা তোড়জোড় দেখা গেলেও পরে খুব একটা সাড়া মেলে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নূর মোহাম্মদ খান নামে আরেকজন বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, বলেশ্বর নদের পাড়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক। কিন্তু সিডর আঘাত হানার এক যুগ পার হলেও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বগী এলাকায় এখনও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।’
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, ভাঙনের কবল থেকে নদের পাড়ের বাসিন্দাদের রক্ষা করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগিরই সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বলেশ্বর নদের পাড়ের বগী এলাকায় রিংবাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া জেলার অন্য যেসব স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে তা রোধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা সংস্কার করা হচ্ছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান বলেন, ‘দু-এক দিনের মধ্যে বগী এলাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে রিংবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এরই মধ্যে ওই এলাকায় রেকি করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রিংবাঁধ নির্মাণ করা হবে। কাজ শুরু হলে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে তা শেষ হবে।’
তিনি আরও জানান, বগী এলাকা বেশি ভাঙন প্রবণ হওয়ার কারণে সেখানে নদীশাসন করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। নদীশাসনের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ করা হবে।
তার দেয়া তথ্য মতে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ানে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি শরণখোলা এবং মোড়েলগঞ্জে নদী পাড়ে ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ওই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।